Hot Posts

ইমান কি । ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক । ইমানের সাতটি মূল বিষয়

এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা , ইমান কি, ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক, ইমানের সাতটি মূল বিষয় নিয়ে জনব। 

    ইমান কি, ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক, ইমানের সাতটি মূল বিষয়


    ইমান কি 

    ইমান শব্দটি আমনুন মূল ধাতু থেকে নির্গত । যার অর্থ- বিশ্বাস করা, আস্থা স্থাপন, স্বীকৃতি দেওয়া, নির্ভর করা, মেনে নেওয়া ইত্যাদি।

    ইসলামি পরিভাষায়, শরিয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং তদনুযায়ী আমল করাকে ইমান বলে ।

    ইমানের পরিচয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন

    ه أن تؤمن بالله وملايكته وكتبه ورسله واليوم الأخير وتؤمن بالقدر خيره و

    অর্থ: ইমান হচ্ছে- “আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভালো মন্দের (ভালো-মন্দ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।” (মুসলিম)

    একটি হাদিসে মহানবি (স.) সুন্দরভাবে ইসলামের মূল পরিচয় তুলে ধরেছেন।

    তিনি বলেন

    الثروة وتصوم دا شول الله وقيم الصلؤ و الإسلام أن تشهد ان لا اله الا الله وان رمضان وتحج البيت إن استطعت اليه سبيلا

    প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসকেই বলা হয় ইমান । ইমানের মৌলিক বিষয়গুলো আল্লাহর বাণী আল-কুরআন ও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পবিত্র হাদিসে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

    ইমানে মুফাসসালে ইমানের মৌলিক বিষয়গুলো একত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন

    أمن بالله وملائكته وكتبه وشله واليوم الأخير والقير يرد ورد من الله تعالى والبغي بغد المؤت۔

    অর্থ: “আমি ইমান আনলাম আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তার কিতাবগুলোর প্রতি, তার রাসুলগণের প্রতি, আখিরাতের প্রতি, তকদিরের প্রতি যার ভালো-মন্দ আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকেই হয় এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি।”

    বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি সুদৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস ব্যতীত ইমানদার হওয়া যায় না । যিনি এগুলোতে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেন, তাকে বলা হয় মুমিন ।

    ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক

    ইমান ও ইসলাম দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা। ইমান অর্থ বিশ্বাস । ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও তদনুযায়ী আমল করাকে ইমান বলা হয়। অন্যদিকে ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ, আনুগত্য ইত্যাদি। মহান আল্লাহর যাবতীয় আদেশ নিষেধ বিনাদ্বিধায় মেনে নেওয়ার মাধ্যমে তার প্রতি পূর্ণাঙ্গরূপে আত্মসমর্পণ করার নাম হল ইসলাম।

    ইমান ও ইসলামের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। এদের একটি ব্যতীত অন্যটি কল্পনাও করা যায় না। এদের একটি অপরটির উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল । ইমান ও ইসলামের সম্পর্ক গাছের মূল ও শাখা-প্রশাখার মতো। ইমান হল গাছের শিকড় বা মূল আর ইসলাম তার শাখা-প্রশাখা । মূল না থাকলে। শাখা-প্রশাখা হয় না। আর শাখা-প্রশাখা না থাকলে মূল বা শিকড় মূল্যহীন। দ্রুপ ইমান ও ইসলাম একটি অন্যটি ব্যতীত পূর্ণাঙ্গ হয় না। ইমান মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, অনুরাগ ও তার সন্তুষ্টি লাভের বাসনা সৃষ্টি করে। আর তাতে ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে সজীব ও সতেজ হয়ে পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে বিকশিত হয় ইসলাম। ইসলাম হল ইমানের বহিঃপ্রকাশ। ইমান হল অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। আর ইসলাম বাহ্যিক আচার-আচরণ ও কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- আল্লাহ, রাসুল, ফেরেশতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বাস করা হল ইমান। আর সালাত, যাকাত, হজ ইত্যাদি বিষয় পালন করা হলা ইসলাম।

    প্রকৃতপক্ষে, ইমান ও ইসলাম একটি অপরটির পরিপূরক। দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে হলে ইমান ও ইসলাম উভয়টিকেই পরিপূর্ণভাবে স্বীয় জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।

    ইমানের সাতটি মূল বিষয়

    ইমান অর্থ বিশ্বাস। একজন মুসলিমকে ইমানের কতগুলো মৌলিক বিষয়ে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয়। এগুলা আল- কুরআন ও হাদিস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। এ বিষয়গুলোতে বিশ্বাস ব্যতীত কেউই। মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না। এরূপ বিষয় মোট ৭টি। এগুলো হলো

    ১. আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস
    ইমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হল আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই। তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা। তিনি সকল গুণের আধার। তাঁর সত্তা ও গুণাবলি তুলনাহীন। সমস্ত প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তারই জন্য নির্ধারিত। আল্লাহ তায়ালার প্রতি এরূপ বিশ্বাস স্থাপন ইমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

    ২. ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস
    ফেরেশতাগণ মহান আল্লাহর এক বিশেষ সৃষ্টি। তাঁরা নুরের তৈরি। তারা সবসময় আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও হুকুম পালনে নিয়োজিত। তাদের সংখ্যা অগণিত। তারা নারীও নন, পুরুষও নন। তাঁরা পানাহার ও | জৈবিক চাহিদা থেকে মুক্ত। তাঁদের প্রতি এরূপ বিশ্বাস রাখা ইমানের অন্তর্ভুক্ত।

    ৩. আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস

    আসমানি কিতাবসমূহ আল্লাহ তায়ালার বাণী। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নিজ পরিচয় প্রদান করেছেন। নানা আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, সুসংবাদ, সতর্কবাণী ইত্যাদিও এগুলোর মাধ্যমেই এসেছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলগণের নিকট এসব কিতাব পাঠিয়েছেন। দুনিয়াতে সর্বমোট ১০৪ খানা আসমানি কিতাব নাজিল করা হয়েছে। এ সমস্ত কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক।

    ৪. নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস
    মানব জাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। নবি-রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। সকল সৃষ্টির মধ্যে তারাই সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা | ছিলেন নিস্পাপ। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তারা মানব জাতিকে মহান আল্লাহর পথে ডেকেছেন, সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়েছেন, ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি ও মুক্তির দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। নবি-রাসুলগণের প্রতি এরূপ বিশ্বাস রাখা ইমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

    ৫. আখিরাতে বিশ্বাস
    আখিরাত হল পরকাল । আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। সেখানে মানুষকে দুনিয়ার জীবনের সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে। কবর, হাশর, মিযান, সিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি আখিরাত জীবনের এক একটি পর্যায় । দুনিয়াতে ভালো কাজ করলে মানুষ জান্নাত লাভ করবে। আর ইমান না আনলে, অসৎ কাজ করলে মানুষের স্থান হবে ভীষণ আযাবের স্থান জাহান্নাম। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। |

    ৬. তকদিরে বিশ্বাস
    তকদির অর্থ হল নির্ধারিত পরিমাণ, ভাগ্য বা নিয়তি । আল্লাহ তায়ালা মানুষের তকদিরের নিয়ন্ত্রক । তিনিই তকদিরের ভালো মন্দ নির্ধারণকারী। মানুষ যা চায় তা-ই সে করতে পারবে না। বরং মানুষ শুধু তার কাজের জন্য চেষ্টা সাধনা করবে। অতঃপর ফলাফলের জন্য আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করবে। যদি চেষ্টা করার পরও কোনো কিছু না পায় তবে হতাশ হবে না। আর যদি পেয়ে যায় তবুও খুশিতে আত্মহারা হবে না। বরং সবর (ধৈর্য ধারণ করবে ও শোকর কেতাদ্বতা) আদায় করবে। আর তকদিরের ভালোমন্দ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে । মনে প্রাণ এরূপ বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।

    ৭. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস
    মৃত্যুর সাথে সাথেই মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায় না। বরং মানবজীবন দুইভাগে বিভক্ত। ইহকাল ও পরকাল। ইহকাল হলাে দুনিয়ার জীবন। আর পরকাল হল মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করবেন। সে সময় সকল মানুষ হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। আল্লাহ তায়ালা সেদিন বিচারক হিসেবে মানুষের সকল কাজের হিসাব নেবেন। অতঃপর মানুষকে তার ভালো কাজের জন্য পুরস্কার স্বরূপ জান্নাতে ও মন্দকাজের শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। সুতরাং মৃত্যুর পর আমরা সবাই পুনরায় জীবিত হব এ বিশ্বাস রাখা ইমানের অপরিহার্য বিষয়।

    Read More: